হুমায়ুন কবির, খোকসা/
ছোটবেলায় বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে বাবার হাত ধরেই অন্যের ঘর নির্মাণের জোগালে (কাজ সহকারী) হিসাবে কাজে যোগদান করে সিহাব, রেজা ও মুরাদ। সেই থেকে ১৬ বছর যাবত কাজের অভিজ্ঞতায় এখন পূর্ণ রাজমিস্ত্রি পরিণত হয়েছে। এখনো মানুষের ঘর তৈরি করে বেড়ারেও তাদের নিজেদেরই থাকার ঘর নাই। এমন আক্ষেপ রাজমিস্ত্রি পরিবারের আপন তিন ভায়ের।
ভাগ্যাহত এসকল রাজমিস্ত্রিরা অন্যের বড় বড় অট্টালিকা তৈরি করলেও নিজের ছেলে বা মেয়ে সন্তান নিয়ে এখনও ঝুপরি ঘরে বসবাস করতে হয়। কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার গড়াই পাড়ের ওসমানপুর ইউনিয়নের নদীর কূল ঘেঁষে এদের বাড়ি। তিন ভাইয়ের নাম সিহাব, রেজা ও মুরাদ। প্রতিদিন নিজেদের ভাগ্যের এক মুঠো অন্ন জোগাড় করতে নদী পার হয়ে কাজের জন্য এসে বসে থাকে। কখন যেন বাড়ি নির্মাণের ঢালাইয়ের কাজে তাদের ডাকা হয়।
প্রতিদিনের ন্যায় আজও সোমবার সকালেই বেলা ওঠার আগেই দুপুরের খাবার হাতে নিয়ে কাজে এসেছি। আজ কাজও পেয়েছি শোমসপুর ইউনিয়নের পাশে একটি বাড়ির ছাদ ঢালায়। আমরা ১২ জন নির্বাণ শ্রর্মিক যাচ্ছি ছাদ ঢালাই এর কাজে। প্রতিদিনই এভাবেই কনোনা কোন বাড়ির ছাদ ঢালাইয়ের কাজে আমরা নিয়োজিত থাকি। অথচ আমাদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি আজও। প্রতিদিনের দিনমজুরি যে হাজিরা পায় তা দিয়ে চাল ডাল ছেলে-মেয়ের অসুখ-বিসুখের ঔষধ আর তরিতরকারি কিনতে ফুরিয়ে যায়। কি করে ভাবি নিজের একটি ঘর নির্মাণ করব।
নির্মাণ শ্রমিক মো. মুরাদ আক্ষেপ করে বললেন, জীবনের ২৮ টি বছর এভাবেই মানুষের বাড়ির নির্মাণ করে দিই, অথচ যা আমরা প্রতিদিনের আয় করি তা দিয়ে আমাদের নিত্য দিনের সংসারই চালাতে পারিনা। এরপরও গড়াই নদী পাড়ের বাড়ি হাওয়াই বাড়ি ভেঙেছে তিনবার। নদীর পাড়েই ভিটামাটিতে অন্যের জায়গায় ঝুপ্টি ঘর বেঁধে এখনো বসবাস করি।
উল্লেখ্য কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলা ওসমানপুর এর প্রায় দুইশতাধিক নির্মাণ শ্রমিক প্রতিদিন এভাবেই তারা অন্যের ঘর নির্মাণ করলেও ওদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না যুগের পর যুগও।
Leave a Reply